সাধারণ আলোচনা ঃ
রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের রাজশাহী শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৭৩ সালে। ঢাকা কলেজ এবং চট্টগ্রাম কলেজের পরে এটি দেশের তৃতীয় প্রাচীনতম কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৬৮৫টি কলেজের মধ্যে, ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের সেরা কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
বাংলাদেশে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদানের প্রবর্তন প্রথম এই কলেজ থেকেই শুরু হয়েছিল। এটি রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এর পাশে অবস্থিত। স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছিল এর পাশেই অবস্থিত প্রাচীন এই কলেজের কারণে।
রাজশাহী কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স ও সম্মান ডিগ্রি প্রদান করে। যদিও ১৯৯৬ সালে এই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্র ভর্তি বন্ধ করা হয়েছিল, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনরায় তা চালু করা হয়।
রাজশাহী কলেজ তার শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান করে এবং বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhB3uREUqkeqvv734NT3DjojHYojSv9YOSqt04soFicF9xskkrjW68_vC2mxd-OHUleAIXcTcu7Nw550p5hJklJr2tF46VhxgZ3IytxCWsOY5A4iM-XW3fOHrTkRrUgC0NzeXFm7QJ8ytUIqTtCBA6zcfThgJ71O5lMuRetKGRA0Xzlax5J7tnR2Id6jNfj/s1600/download.jpeg) |
রাজশাহী কলেজ |
ইতিহাস ও পটভূমি ঃ
শিক্ষানগরী হিসেবে রাজশাহী মহানগরীর প্রতিষ্ঠা হয় ১৮২৮ সালে বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি তখনকার পূর্ব বাংলায় আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রদূত ছিল। ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন ও প্রসারের উদ্দেশ্যে তৎকালীন ইংরেজ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৩৬ সালে প্রাদেশিক সরকার স্কুলটি জাতীয়করণ করলে এটি রাজশাহী জেলা স্কুল নামে পরিচিতি লাভ করে, যা বর্তমানে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল হিসেবে পরিচিত।
সে সময় স্কুলের ছাত্রদের উচ্চতর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে, রাজশাহী অঞ্চলের বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রচেষ্টায় ১৮৭৩ সালে জেলা স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের মর্যাদা দেওয়া হয়। একই বছর ৫ জন হিন্দু ও ১ জন মুসলমান ছাত্র নিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের এফ. এ (ফার্স্ট আর্টস) কোর্স চালু হয়। ১৮৭৮ সালে এই কলেজকে প্রথম গ্রেড মর্যাদা দিয়ে “রাজশাহী কলেজ” নামে নামকরণ করা হয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে বি.এ. কোর্স চালু হয়। এর ফলে এটি উত্তরবঙ্গের প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
অবদান ঃ
১৮৮১ সালে রাজশাহী কলেজে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর উদ্বোধন করা হয় এবং ১৮৮৩ সালে বি.এল কোর্স যোগ হয়। তবে, ১৯০৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আইনে কলেজটি মাস্টার্স ও বি.এল কোর্সের অধিভুক্তি বাতিল করা হয়, কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল।
আরো কিছু ঘটনা ঃ
রাজশাহী শহরে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে স্থানীয় ভূস্বামী রাজা, জমিদার এবং বিত্তশালীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন দুবলাহাটির জমিদার হরনাথ রায় চৌধুরী, দীঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়, রাজা প্রমোদ রায় ও বসন্ত রায়, পুঠিয়ার রাণী শরৎসুন্দরী দেবী ও হেমন্ত কুমারী দেবী, বলিহারীর কুমার শরবিন্দু রায়, খান বাহাদুর এমাদ উদ্দীন আহমেদ, কিমিয়া-ই-সাদাতের অনুবাদক মীর্জা মোঃ ইউসুফ আলী, হাজী লাল মোহাম্মদ, এবং নাটোরের জমিদার পরিবারের খান বাহাদুর রশীদ খান চৌধুরী, খান বাহাদুর এরশাদ আল খান চৌধুরী ও বঙ্গীয় আইন পরিষদের ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার আশরাফ আলী খান চৌধুরী।
এছাড়া নাটোরের খান চৌধুরী জমিদার পরিবার রাজশাহী শহরের হেতেম খাঁ এলাকায় তাদের পারিবারিক বাসস্থান চৌধুরী লজে রাজশাহী কলেজে অধ্যয়নরত প্রায় বিশ জন দরিদ্র মুসলমান ছাত্রের বিনা ভাড়ায় থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তদানীন্তন পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজের শিক্ষার উন্নয়নে তাদের এই ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
আরো পড়ুন :
মেসি–নেইমার–এমবাপ্পেরা পারেননি
কলেজের প্রশাসনিক ভবনটি ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত হয় এবং এর নির্মাণকাল ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন হরগোবিন্দ সেন, যিনি রাজশাহী জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৮৭৩ থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৭৫ সালে প্রথম ব্যাচের এফ.এ পরীক্ষায় মাত্র দুইজন ছাত্র পাশ করেন। এ সময় সরকার কলেজটি বন্ধ করার কথা ভাবছিল, তবে রাজশাহী এসোসিয়েশন-এর প্রচেষ্টায় কলেজটি আপগ্রেড করে বি.এ. কোর্স প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজশাহী এসোসিয়েশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায় বাহাদুর রাজশাহী কলেজে ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তনের জন্য ১৫০,০০০ টাকা দান করেন। ফলে ১৮৭৭ সালে ডিগ্রী প্রোগ্রামের অনুমোদন পাওয়া যায় এবং ১৮৭৮ সালে বি.এ. কোর্স চালু হয়। এফ. টি. ডাওডিং ১৮৭৯ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url